করোনার সময় সারাদেশে ঈদ সামনে রেখে অজ্ঞান-মলম পার্টির তৎপরতা বেড়েছে। বাস-লঞ্চ-ট্রেন টার্মিনালসহ জনাকীর্ণ স্থানে হকার সেজে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে তারা। আর এসব খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে চেতনানাশক ওষুধ। ফলে এগুলো ক্রয় করে কেউ খেলেই মাশুল দিতে হচ্ছে। কখনো কখনো চেতনানাশক ওষুধের মাত্রা বেশি পড়ায় ভিকটিম মারা যাচ্ছে। কেউবা স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতেই পারছে না। ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। একের পর এক তালিকা করেও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হাতে গোনা কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবার একই কাজে জড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন জেলায় শতাধিক সদস্য অজ্ঞান পার্টির সাথে যুক্ত।
বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অজ্ঞান পার্টির শতাধিক গ্রুপ সক্রিয়। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সহজ-সরল মানুষকে লক্ষ্য করে ফেরিওয়ালা সেজে জুস, ডাবের পানি, খেজুর, ঝাল মুড়ি, শরবতসহ নানা উপকরণ বিক্রি করছে। আর প্রতারিত মানুষ সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি জীবন হারানোর মতো ঝুঁকিতে পড়ছেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ জন মানুষ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে অপরিচিত কারও দেওয়া খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালিয়ে তারা অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করছে বলেও দাবি করেছে। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, রোজা ও ঈদকে টার্গেট করে ১০/১২টি অজ্ঞান পার্টির চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের সদস্য সংখ্যা অন্তত ১০০। তারা যাত্রী ও হকার বেশে যাত্রীদের অজ্ঞান করে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। চেতনানাশক ট্যাবলেট, বিষাক্ত মলম ও বিষমিশ্রিত পানীয় মিশিয়ে দিয়ে তারা সাধারণ মানুষের সর্বস্ব লুট করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছরই ঈদকে টার্গেট করে রমজানের শুরুতেই তৎপর হয়ে ওঠে অজ্ঞান ও মলম পার্টি। তারা নানা ছদ্মবেশে বাস- ট্রেন-লঞ্চ এবং জনসমাগমপূর্ণ স্থানে অবস্থান করে। সাধারণ ফেরিওয়ালাদের সঙ্গে মিশে তারা ইফতার সামগ্রীসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে। যাত্রীদের মধ্যে তারা সাধারণত টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাবার বিক্রি করে। এসব খাবার খেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে চক্রের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তির সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে।
অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা সাধারণত তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে। একটি গ্রুপ ফেরি করে খাবার বিক্রি করে। আরেক গ্রুপ উদ্ধারকর্মী হিসেবে আশপাশেই ঘোরাঘুরি করে। তৃতীয় গ্রুপ রিকশা বা সিএনজি নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসে থাকে। টার্গেট ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়লে পরিচিত সহযাত্রী অথবা কাছের আত্মীয় হিসেবে দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যরা এগিয়ে যায়। অচেতন ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার নাম করে তারা নিজেদের (তৃতীয় গ্রুপ) যানবাহনে তোলে। এরপর সুযোগ বুঝে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে অচেতন ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা যাত্রীবেশে বিভিন্ন রুটের বাস, লঞ্চ ও রেলগাড়িতে ক্যানভাসার এবং সাধারণ যাত্রী বেশে উঠছে। চলন্ত বাস, লঞ্চ ও রেলগাড়িতে অবস্থানরত যাত্রীদের টার্গেট করে কৌশলে নেশাজাতীয় উপাদান খাইয়ে অচেতন করে। পরে সুযোগ বুঝে সর্বস্ব লুট করে পালিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় নেশাজাতীয় উপাদানের মাত্রা বেশি হলে অচেতন ব্যক্তি মারাও যায়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে এদের তৎপরতা বেড়ে যায়। অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের বেশকিছু সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। যানবাহনের যাত্রী বা পথচারীদের উচিত অপরিচিত কারও দেওয়া কিছু না খাওয়া।