এ যেন সবুজের বুকে হলুদ ফুলের মেলা

আঠারোটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলেই গঠিত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা। বিস্তীর্ণ এই জনপদের ৪০৩হেক্টর জমিতে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠের দৃশ্য দেখলে মনে হয়,সবুজের বুকে হলুদ ফুলের মেলা। সবুজ আর হলুদ রংয়ের কি অপরূপ প্রাকৃতিক সাজ। এটি গ্রামের কর্মবীরদের শ্রমের গড়া ফসল সরিষা ক্ষেত। পাশ দিয়ে হাটঁলে যেন সরিষা ফুলের মৌ-মৌ মিষ্টি গন্ধের সুবাসে মনজুড়িয়ে যায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার সাহারবিল, ফাঁসিয়াখালী, কৈয়ারবিল, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, কোনাখালী, বরইতলী, ডুলাহাজারা, চিরিংগা ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার বিভিন্ন স্হান মিলে ৪০৩হেক্টর জমিতে সরিষা ক্ষেত করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। সরিষা চাষটি এলাকার জন্য নতুন চাষ হলেও উপজেলা কৃষিবিভাগের সহযোগিতায় সরিষা চাষের পরিমাণ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে প্রান্তিক কৃষক এই চাষের প্রতি আগ্রহটা বাড়ল।যেমন স্বগ্রাহে চাষ করছেন, তেমনি প্রাকৃতিক পরিবেশ অনূকুলে থাকায় ফলনও ভালো, আশানুরূপ দাম পাবেন প্রত্যাশা চাষিদের। সরিষার বাম্পার ফলনে, প্রান্তিক চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক উপলদ্ধির মত।

উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব দে বলেন, এ উপজেলাতে গত বছরের তুলনায় চলিত মৌসুমে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ফলে এবছরে মোট ৪০৩ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। তিন চাষ জমি ও পরিত্যত্ত জমিতে আমরা আগ্রহী কৃষকে প্রশিক্ষণ প্রদান মাধ্যমে চাষ করাচ্ছি। সেই সাথে উপ-কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমের মনিটরিংনে সরিষার বাম্পার ফলনও হয়েছে।

আব্দুল মতলব, দুদুমিয়া, আঃ করিম সহ কয়েকজন চাষিদের সাথে কথা বলে জেনেছি, বিগত তিন বছর ধরে সরিষা চাষ করছেন তারা। তাদের চাষ দেখে চলিত বছর আরো চাষি বেড়েছে। উপজেলার কৃষি অফিস থেকে তাদের প্রশিক্ষণ, সার, বীজ সহ বিভিন্ন প্রণোদনাও দিয়েছেন। সব মিলিয়ে চাষের ক্ষেত্রে প্রতি ৪০শতক জমি সার, বীজ, পরিচর্যা খরচ মিলে হয়েছেন ৫/৬ হাজার টাকা।

গেল বছরে একমণ সরিষার বিক্রি হয়েছিল ২/৩ হাজার টাকা।তাই এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশও ভাল বলে ফলনও ভাল হয়েছে। তাছাড়া ভোজ্যতেলের চড়া দাম। সেক্ষেত্রে চলিত মৌসুমে সরিষার প্রতিমণের বিক্রি গেল বছরে তুলনায় বেশি পাওয়ার আশা করেছেন প্রান্তিক চাষিরা।

চাষিরা আরো জানান, কম খরচ ও অল্প দিনের পরিচর্যার মাধ্যমে সরিষা চাষ যে সম্ভব আগে জানতাম না। সরিষা চাষে অন্য চাষের চেয়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। ফলে প্রতি বছর সরিষা চাষও বেড়েছে, পরিত্যক্ত কিছু জমি সরিষা চাষের মাধ্যমে আবাদও হয়েছে, বেকারত্বও কেটেছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে, আয় বাড়ল, অভাব দূর্বিত হলো। ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হলো।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেনের বলেন, চলিত মৌসুমে ৪০৩ হেক্টর জমিতে সরিষা হয়েছে। যা গেল বছরে তুলনায় প্রায় ১৫০হেক্টর বেশি। তাছাড়া উপজেলাটি কৃষি প্রধান হিসাবে বিবেচ্য বটে। তাই ধান,বিভিন্ন সবজি চাষের পাশাপাশি সরিষা চাষের আবাদ ঘটিয়েছি। সরকার সমগ্র দেশে অন্যন্যা চাষের পাশাপাশি সরিষা চাষে উৎসাহিত করতে কৃষকদের মাঝে সার, বীজ সহ প্রণোদনা প্রদান করেন। যা আমরা কৃষককে দিয়েছি। তাছাড়া উৎপাদিত সরিষার বাজারজাতে ন্যায্য মূল্য পায়, আমরা প্রচেষ্টায় থাকব যেন আগামী বছর আরো চাষিসহ জমির পরিমাণ বাড়িয়ে চাষ করানো যায়।