টাইব্রেকারের উত্তেজনা শেষে সেমিতে আর্জেন্টিনা

টান টান উত্তেজনার পর নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিতে লিওনেল স্ক্যালোনির দল। মেসির স্বপ্ন পূরণে আর দুই ম্যাচ বাকি।

আজ শনিবার খেলায় দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও সে লিড শেষ সময়ে খুইয়ে বসেছিল আর্জেন্টিনা। যে কারণে খেলাটা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে আক্রমনের পর আক্রমন করেও গোল পায়নি মেসিরা। ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শ্যুট আউটে। সেখান থেকে দলকে শঙ্কামুক্ত করেন পর পর দুই গোল ঠেকিয়ে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। শেষমেশ সকল শঙ্কা কাটিয়ে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল লিওনেল স্ক্যালোনির দল।

খেলার প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা অনেকটা নিষ্প্রাণ ছিল। তবে এর মধ্যেই মেসি সুন্দর পাসে আর্জেন্টিনার প্রথম গোল এনে দেন মলিনা । খেলার ৩৫তম মিনিটে মাঝমাঠে বল পেয়ে ছোট একটা ‘শোল্ডার ড্রপে’ তিন মার্কারকে ছিটকে দিলেন, এরপর সামনে থাকা তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে দারুণ এক থ্রু। বক্সে এগোতে থাকা মলিনা দারুণ এক টাচে বলটা নেদারর‌্যান্ডের জালে জড়াতে ভুল করেননি। দ্বিতীয়ার্ধে ৭৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় গোল এনে দেন মেসি।

আর্জেন্টিনা দুই গোলে এগিয়ে থেকে যখন সেমির প্রহর গুণছে, তখনই নেদারল্যান্ডস চমৎকারভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। মেসিদের সেমিতে যাওয়ার অপেক্ষায় রাখেন ভাউট ভের্গহর্স্ট। স্টিভেন বার্ঘাউসের বাড়ানো ক্রসে চমৎকার হেড করে ভাউট ভের্গহর্স্ট। আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ধরতে না পারলে আছড়ে পড়ে জালে। এই গোলই আর্জেন্টিনাকে স্তব্ধ করে দেয়। হতাশায় ওলোটপালট আর্জেন্টিনা। তাই তো একেবারে শেষ মুহূর্তে যখন বাশি বাজার অপেক্ষায় তখন কেন হেরমান পেৎজেলা অহেতুক ফাউলটা করে বসবেন? এই এক ফাউলই খেলাটা নিয়ে যায় অতিরিক্ত সময়ে। দারুন এক ফ্রি কিকে বক্সের ভেতর বলটা একা পেয়ে যান ভের্গহর্স্ট। লিসান্দ্রো মার্টিনেজ সেটা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেও পারেন নি। ফলে বলটা এমিলিয়ানো মার্টিনেজের নাগালের বাইরে দিয়ে আর্জেন্টিনার জালে জড়িয়ে দেন ভের্গহর্স্ট। ২-২ সমতায় ডাচরা। ফলে অতিরিক্ত সময়ে চলে যায় আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ।

সেখানে মেসিরা বেশ কয়েকটি আক্রমণ করেছে। হয়েছে প্রতি-আক্রমণও। তবে কোন গোলের দেখা পায়নি কেউ। ফলে সেমির ভাগ্য নির্ধারণ করতে প্রয়োজন পড়ে টাইব্রেকারের।
টাইব্রেকারে বুক চিতিয়ে সামনে আসেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। প্রথম শট নিতে আসা ভার্জিল ফন ডাইককে অনায়াশে ঠেকিয়ে। এরপর মেসি প্রত্যাশিত গোল। এরপরে ডাচদের গোলের পথে ফের বাথা হয়ে দাঁড়ান মার্টিনেজ। দ্বিতীয় শটটা নিতে আসা স্টিভেন বার্ঘাউসকেও রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার। পরে লিয়ান্দ্রো পারেদেস দারুণ শট আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেয়। তিন নম্বর পেনাল্টি নিতে আসা ডাচ তিউন কোপমাইনার্স এবং আর্জেন্টাইন গনজালো মন্তিয়েল সবাই গোল পায়। ডাচদের ভের্গহর্স্টও গোল করেন। এরপর টেনশনে ফেলে দেন আলবিসেলেস্তেদের।

চতুর্থ শট নেয়া এনজো ফের্নান্দেজের ওপর ছিল আর্জেন্টিনাকে জেতানোর দায়িত্ব। কিন্তু তিনি পারেন নি; গোল করতে ব্যর্থ হন। ফের লিড হারিয়ে বসার শঙ্কায় আর্জেন্টিনা। ডাচদের পঞ্চম শট নিতে আসা লুক ডি ইয়ংও গোলটা করে ফেলেন। ফলে ৩-৩ সমতা।

তবে শেষ শট নিতে আসা লাওতারো মার্টিনেজ কোন ভুল করেননি। দারুণ এক পেনাল্টি শটে ডাচ গোলরক্ষক আন্দ্রিয়েস নোপার্টকে ফাঁকি দিয়ে জড়িয়েছে জালে। সাথে সাথে উল্লাস শুরু হয়ে আর্জেন্টাইনদের। ৮ বছর পর আবারও মেসির আর্জেন্টিনা চলে যায় বিশ্বকাপের শেষ চারে।

সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনাদের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া।