নাটকীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাল উইন্ডিজ

ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নামিয়ে আনলেন দুই রানে। দুই বল পর দারুণ এক কাভার ড্রাইভে দুই রান নিয়ে শেষ করলেন ম্যাচ- বল হাতে অনেকবারই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের নায়ক হয়েছেন কেমার রোচ। এবার তিনি জেতালেন ব্যাট হাতে। তাও কি না ১ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয়।

ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষেই বোঝা যাচ্ছিল, রোমাঞ্চ ও নাটকীয়তায় ঠাসা পঞ্চম দিন নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার জ্যামাইকা টেস্ট। হলোও ঠিক তাই। যেখানে পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে স্বাগতিকরা। পাকিস্তানকে পুড়তে হয়েছে ক্যাচ মিসের হতাশায়।

পাকিস্তানের দেয়া ১৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে রীতিমতো ঘাম ছুটেছে ক্যারিবীয়দের। তবে জার্মেইন ব্ল্যাকউডের ফিফটি ও শেষ দিকে রোচের দৃঢ়তায় জয়ীর হাসি নিয়েই মাঠ ছেড়েছে তারা। নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো ১ উইকেটের ব্যবধানে টেস্ট জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

রোববার ৫ উইকেটে ১৬০ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিল পাকিস্তান। তাদের আশা ভরসার প্রতীক হয়ে অপরাজিত ছিলেন বাবর আজম, সঙ্গ দিচ্ছিলেন অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ। কিন্তু শেষ দিন বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তারা। দিনের সাত ওভারের মধ্যে সাজঘরে ফিরে যান বাবর (৫৫) ও ফাহিম (২০)।

মাত্র ১৭০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন কঠিন বিপদে সফরকারীরা। কেননা প্রথম ইনিংসে ৩৬ রানে পিছিয়ে থাকায় তাদের লিড তখন মাত্র ১৩৪ রানের। সেখান থেকে শেষ দিকে ২৬ বলে ২৮ রানের ঝড় তুলে দলকে দুইশ পার করান ডানহাতি পেসার হাসান আলি। পাকিস্তান অলআউট হয় ২০৩ রানে, ক্যারিবীয়দের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬৮ রানের।

প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৯ বছর বয়সী পেসার জেডন সিলস। তিনিই এখন টেস্ট ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বকনিষ্ঠ ৫ উইকেট শিকারি বোলার। এছাড়া ৩ উইকেট নিয়েছেন কেমার রোচ।

খালি চোখে ১৬৮ রান খুব কম মনে হলেও, টেস্টের পঞ্চম দিনে এ রান মোটেও সহজ নয়। প্রথম সেশন শেষ হওয়ার আগে মাত্র ১৬ রানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে সে বার্তাই দিয়েছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। অধিনায়ক কার্লোস ব্রাথওয়েট ২, কাইরান পাওয়েল ৪ ও এনক্রুমাহ বোনার করেন ৭ রান।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬৮ রান যোগ করে প্রাথমিক চাপ সামাল দেন রস্টোন চেজ ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড। কিন্তু দলীয় ৮৪ রানে চেজ (২২) ও ৯২ রানে কাইল মায়ারস (০) সাজঘরে ফিরে গেলে আবার বিপদে পড়ে যায় ক্যারিবীয়রা। ম্যাচের প্রথম ইনিংসেও শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন মায়ারস।

দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর জেসন হোল্ডারকে নিয়ে পুনরায় লক্ষ্য তাড়ায় মনোযোগ দেন ব্ল্যাকউড। আবারও ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। দলীয় ১১১ রানে ব্ল্যাকউড (৫৫) ও ১১৪ রানে হোল্ডারকে (১৩) সাজঘরে পাঠিয়ে ম্যাচের পাল্লা নিজেদের দিকে টেনে নেয় পাকিস্তান।

সেখান থেকে অষ্টম উইকেটে ২৮ রান যোগ করেন জশুয়া ডা সিলভা ও কেমার রোচ। কিন্তু জয় থেকে ২৬ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান জশুয়া (১৬)। ফলে পুরো দায়িত্ব বর্তায় রোচের কাঁধে। ইনিংসের ১৫১ রানের মাথায় মোহাম্মদ রিজওয়ানের দুর্দান্ত ক্যাচে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন জোমেল ওয়ারিকান।

এরপর বাকি থাকা ১৭ রানের জন্য লড়াই-সংগ্রাম শুরু করেন বল হাতে পাকিস্তানের কঠিন পরীক্ষা নেয়া রোচ ও সিলস। একেকটি বল খেলেছেন আর যেন বার্তা দিয়েছেন, ম্যাচ শেষ না করে ফিরবেন না তারা। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ৫৭তম ওভারের পঞ্চম বলে দুই রান নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন রোচ। তিনি অপরাজিত থাকেন ৩০ রান করে, সিলসের ব্যাট থেকে আসে ২ রান।

দুই ইনিংস মিলে ৫ উইকেটের পাশাপাশি ম্যাচ জেতানো ৩০ রানের ইনিংস খেললেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন রেকর্ড গড়া সিলস। যিনি ম্যাচে নিয়েছেন ৮টি উইকেট।