জাকিয়া আলম জুই। একজন তারুন্য দ্বীপ্ত, উদীয়মান উদ্যোক্তা। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। এবার বাবা জাহাঙ্গীর আলমের ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে চান। তার জন্য সেই ব্যবসার হাল ধরেছেন জুই। তবে শুধু ব্যবসার খাতিরে নয়। দেশের পরিবেশের জন্য। দেশ বাঁচাতে তার এ পথচলা। বর্তমানে জাকিয়া আলম জুই জাকিয়া ব্লক এন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কীভাবে সে পথ পাড়ি দিবেন? তাই জানতে সম্প্রতি জয়বাংলানিউজের নির্বাহী সম্পাদক মো. হেদায়েতুল ইসলাম তার একটি স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন। স্বাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ নীচে পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল :
জয়বাংলানিউজ : সবাই দেশের জন্য কিছু একটা করতে চায়। আপনি এ দেশের জন্য কী করছেন বা করতে চাইছেন ?
জাকিয়া জুই : দেখুন, কে – কি করল বা দিল সেটা বিষয় নয়। বিষয় হল, আমি কী করছি বা দিচ্ছি; নিজের দেশের জন্য, সেটাই হল বড় বিষয়। ছোটবেলা থেকেই বইতে পড়েছি, দেশ হল মা। সেই মাকে(দেশ) এত অল্পতেই ভুলে যাব? তা কী করে সম্ভব! আমার পক্ষে তো নয়ই। আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তাই কোন পিছুটান নেই। অভাব-অনটনও নেই। নেই কোন লোভ-মোহ। তাছাড়া, আমার প্রিয় বাংলাদেশকে আমি খুব ভালবাসি। সেই লক্ষেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। যদিও করোনার ধাবায় একটু বেগ পেতে হচ্ছে। তবে ভরসা আছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি। তিনি নিশ্চয়ই ভাল কিছু করতে সাহায্য করবেন।
জয়বাংলানিউজ : দেশকে ভাল কিছু দিতে চান, কী সেটা? যদি একটু খোলাসা করেন।
জাকিয়া জুই : আমার জন্মেও পর থেকেই দেখে আসছি, আমার দাদা সব সময় মানুষের জন্য নিবেদিত ছিলেন। বাবাও সেই স্বভাবই পেয়েছে। তাহলে আমি আর বাকি থাকি কী করে! রক্তের টান। তবে মানুষের জন্য, দেশের জন্য ভাল কিছু করতে পারলে সবারই বেশ ভাল লাগে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। দাদা তার গ্রামে ডাক্তারী করে মানুষের সেবা দিতেন। বাবা, রাজধানীতে ব্যবসা (জাকিয়া গ্রুপ) করে তার আয় থেকে সমাজসেবা করতেন। তবে আমি ভাবছি ভিন্ন কথা। আমি মনেকরি, দেশ বাঁচলে আমি-আমরা বাঁচবো। তাই দেশ বাঁচাতে কাজ করছি। অর্থাৎ আমাদের পারিবারিক ব্যবসা জাকিয়া বিল্ডার্স এর সঙ্গে ব্লক যুক্ত করেছি। এখন নব উদ্যমে ‘জাকিয়া ব্লক এন্ড বিল্ডার্স লিমিটেড’ যাত্রা শুরু করেছে। যাতে আমাদের পরিবেশ আমরা ভাল রাখতে পারি। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, ইট-ভাটা পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ। তাছাড়া, দিন দিন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও ক্রমান্নয়ে বাড়ছে। প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় দেশজুড়ে নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে উঠছে। ফলে ভবন নির্মাণে ইটের চাহিদাও বাড়ছে। এই সুযোগে সারা দেশে যত্রতত্র অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠছে। সারা দেশে এখন আট হাজারের মতো ইটভাটা রয়েছে, যার বেশির ভাগই অবৈধ। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী করা হয় ইটভাটাকে। অবৈধ ইটভাটার কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গ্রামীণ সড়কসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে ইটের পরিবর্তে ব্লকের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। সরকারি কাজে ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ ব্লক ব্যবহার করতে চায় সরকার। তাই সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে আমরাও ব্লকের ওপর গুরুত্বরাপ করেছি। যাতে বায়ুদূষণ সহনশীল পর্যায়ে রাখতে পারি আমরা। এই দূষণ রোধ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন হাউজিং কোম্পানি, ডেভেলপার কোম্পানি এবং ব্রিকস তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আশা। তাহলে দেশে ভাল থাকবে। ভাল থাকবে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
জয়বাংলানিউজ : কী নিয়ে পড়াশুনা করেছেন? এর পেছনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কী?
জাকিয়া জুই : লন্ডন ইউনির্ভাসিটি থেকে আইনি পেশায় পড়াশুনা শেষ করেছি। পরে এলএলএমে মাস্টার্স করেছি। এডিআর (ADR) Training করেছি BIAC। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদি বলতে হয় তাহলে বলবো, অসহায়,দুস্থ্য নারী-শিশুই নয়, অবহেলিত মানুষকে বিনামূল্যে সব ধরনের আইনি সেবা দেওয়া। পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসা আরও প্রসারিত করতেও আইন পেশায় থাকা দরকার। তবে মূলত, অবহেলিত মানুষদের পাশে থাকাই আমার ইচ্ছা। এর জন্য জাকিয়া ব্লক এন্ড বিল্ডার্স ফাউন্ডেশনেরও পথচলা শুরু হয়েছে। দিনশেষে মানবসেবাই যেন মূখ্য হয়, সে চিন্তা।
জয়বাংলানিউজ : জাকিয়া ব্লক এন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের বর্তমান প্রজেক্ট নিয়ে যদি কিছু বলেন।
জাকিয়া জুই : আমার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ২০০৭ সাল থেকে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। বর্তমানে আমিও যুক্ত হয়েছি। এখন আমাদের জাকিয়া ব্লক এন্ড বিল্ডার্স যাত্রাবাড়ির কোনাপাড়া ও বসিলায় দুটি প্রজেক্টে কাজ করছে। এছাড়াও ধানমন্ডি, বাসাবো আপকামিং প্রজেক্ট রয়েছে। জাকিয়ার নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম রয়েছে। রয়েছে এক্সপোর্ট-ইনপোর্ট ব্যবসাও। নতুন সংযোজন ব্লক।
জয়বাংলানিউজ : ব্লক তৈরির কাজ কতদূও এগোলো। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
জাকিয়া জুই : অলরেডি মেশিন চলে এসেছে। প্রডাকশনে যাওয়ার অপেক্ষায় আছি। পোড়ানো ইট যে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, বিষয়টি সর্বজনস্বীকৃত। পোড়ানো ইট থেকে উন্নত দেশগুলো অনেক আগেই সরে এসেছে। ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার কিছু দেশে বর্তমানে পোড়ানো ইটের ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু তারাও সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে। সারা দেশের পরিবেশের মান উন্নয়নের জন্য, বায়ুর মান উন্নয়নের চিন্তার জায়গা থেকেই ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ’ আইনটিও সংশোধন করা হয়েছে। সরকারি স্থাপনাগুলোর ক্ষেত্রে পোড়ানো ইটের ব্যবহার কমিয়ে আনা হয়েছে। সরকারের ভাবনায় ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারি স্থাপনাগুলোতে ইটের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনা। আমি মনেকরি,পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যার যার জায়গা থেকে নিজেদের ভূমিকা পালন করা দরকার। ইটভাটা কতটা ক্ষতিকর, যে জমি থেকে ইটভাটার জন্য মাটি নেওয়া হচ্ছে সেই জমিতে পরবর্তী পাঁচ বছর কোনো ফসল উৎপাদন হয় না। পাঁচ বছর পর হয়তো কিছু ফসল পাওয়া যায়। অতএব,আমাদেও সুদূরপ্রসারি চিন্তা-ভাবনা করে কাজে নামতে হয়। আমরা তাই করছি, যেহেতু আমাদের ডেভলপার ব্যবসা রয়েছে। অন্তত, আমরা নিজেরা ব্লকে উৎসাহিত হলে অন্যরা উৎসাহিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
জয়বাংলানিউজ : আপনার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা কী?
জাকিয়া জুই : ভবিষ্যৎ নিজের নয়! বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে আমি ভাবছি। সকলেরই উচিৎ নিজের দেশ ও দশের জন্য ভাল কিছু দেওয়া। আমি ব্লক তৈরি ও ব্লকের ভবন নির্মান করে পরিবেশ বান্ধব সমাজ ও দেশ গড়তে চাই।
জয়বাংলানিউজ : জয়বাংলানিউজ.কম.বিডিকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জাকিয়া জুই : আপনাকে এবং জয়বাংলানিউজ পরিবারের সকলকে জাকিয়া ব্লক এন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা।