১১ বছরেও খুঁেজ পাওয়া যাচ্ছে না বঙ্গবন্ধু হত্যায় দন্ডপ্রাপ্ত ৫ খুনিসহ অভিযুক্তদের অবস্থান। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা ৬৪ ব্যক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে। রেড নোটিশ প্রাপ্ত অন্যরা হলো, জেলহত্যা মামলার ২ জন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ৪ জন, যুদ্ধাপরাধী ৫ জন ও অন্য মামলার ৪৮ জনসহ মোট ৫৯ জন। এসব অভিযুক্তরা বিদেশে পলাতক রয়েছেন।
এদিকে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইন্টারপোলের ঢাকা কার্যালয় থেকে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
তবে এখনও অনেকের অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।অভিযোগ রয়েছে, পলাতকরা গ্রেপ্তার এড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে থেকে ঘন ঘন অবস্থান পাল্টাচ্ছে। শুধু তাই নয় সাজাপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত আসামিরা বিদেশে বসে দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর হয় বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি ফারুক রহমান ও সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিনের দণ্ড(ফাসি)।বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি লে. কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরীর সম্ভাব্য অবস্থান কানাডা বলে জানিয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সেনা সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হানা দিয়ে আৎদীয়স্বজনসহ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বললেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যত সময়ই লাগুক না কেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে যাঁরা বিদেশে আছেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে। তাঁদের ধরে আনতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’ তিনি বলেন, ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে শুধু শোক পালন করলে চলবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ইন্টারপোল শাখা থেকে বিদেশে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য দেশগুলোর ইন্টারপোল শাখায় যোগাযোগ করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের মধ্যে জেলহত্যা মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি, তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন মামলার আসামি রয়েছে।সর্বশেষ ২০১৯ সালে এ রেড নোটিশ জারি করা হয়। এ রেড নোটিশের মেয়াদ ৫ বছর। পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল শাখা তাদের তদারকি অব্যাহত রেখেছে।
পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে মোমেন বলেছেন, লে. আবদুল মাজেদেকে ভারত থেকে ফেরত আনা হয়েছে। লে. কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরীর সম্ভাব্য অবস্থান আমেরিকায় (ইউএসএ)। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ ও ২০১৮ সালে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। তার রেড নোটিশের মেয়াদ আগামী ৫ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
পলাতক আসামি লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম তার অবস্থান ঘন ঘন পরিবর্তন করছে। বর্দমানে তার অবস্থান নিদৃষ্ঠ করা না গেলেও ধারনা করা হচ্ছে সে পাকিস্তান বা লিবিয়ায় অবস্থান করছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ২৭ জানুয়ারি রেড নোটিশ জারি করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রেরিত নোটিশের মেয়াদ আগামী ৫ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে বলে পরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সূত্রে আরও জানা গেছে, লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদের অবস্থান এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে তার সম্ভাব্য অবস্থান লিবিয়া ও জিম্বাবুয়ে বলে জানা গেছে। ২০০৯ ও ২০১৯ সালে ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।খান রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের অবস্থান শনাক্তকৃত নয়। তবে সম্ভাব্য অবস্থান পাকিস্তান বলে ধারাণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ ও ২০১৮ সালে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। এ রেড নোটিশের মেয়াদ আগামী ৫ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা গেছে।
১৯৯৬ সালে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে এ অভিযোগটি দায়ের করেন। তারিখ ২-১০-১৯৯৬। সিআইডির এএসপি আবদুল কাহার আকন্দ মামলাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট (নং-৭) তারিখ ১৫(১) ১৯৯৭ দাখিল করেন। চার্জশিটে ২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে ১১ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন জজ কোর্ট হতে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ে ১৫ আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও ৫ আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর উচ্চ আদালত থেকে ১২ জনকে মৃত্যুদন্ড ও ৩ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০০১ সালে এক আসামি জিম্বাবুয়েতে মৃত্যুবরণ করে বলে জানা গেছে।
২০২০ সালের ১২ এপ্রিল রেড নোটিশধারী আসামি লে. আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়। এখনও পলাতক ৫ আসামির গ্রেপ্তারের জন্য রেড নোটিশ জারি আছে।
বাংলাদেশ পুলিশের ইন্টারপোল ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একাধিক কর্মকতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও গ্রেনেড হামলাসহ যে সব মামলার আসামিরা এখনও বিদেশে পালিয়ে আছে,তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের আইনি ও কূটনৈতিক তৎপরতায় দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় কূটনৈতিক আলোচনা হয়েছে। আর বাংলাদেশ পুলিশের ইন্টারপোল শাখা তৎপর রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ মুঠোফোনে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের লোকজনসহ নানা পেশার লোক রয়েছে। তারা চেষ্টা করলে খুনিদের আইনি প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।