মৃত্যু কমলেও স্বস্তি নেই, সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে

তিন সপ্তাহ পর দেশে করোনাভাইরাসে এক দিনে ৬০ জনের কম মৃত্যু হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল একদিনে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর গত ২৫ দিনে আর ৬০-এর নিচে নামেনি মৃত্যু। সবশেষে গত ৩০ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আরও ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩২ ও নারী ২৫ জন। মৃত ৫৭ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩৭, বেসরকারি হাসপাতালে ১৮ ও দুইজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১ হাজার ৪৫০ জনে।

তবে দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু কমে এসেছে বলে স্বস্তির কোনো কারণ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, টানা দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ১০’র নিচে থাকলে বলা যাবে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা তা বলে না।

এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে টানা চার দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০০’র ওপরে। সেসময় ১৯ এপ্রিল দেশে রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশক থেকে বোঝা যায়। তার একটি হলো রোগী শনাক্তের হার। টানা দুই সপ্তাহের বেশি রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।

এ বছর ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। দুই মাস পর গত ১০ মার্চ দৈনিক শনাক্ত আবার হাজার ছাড়ায়। এরপর দৈনিক শনাক্ত বাড়ছেই। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৭ জনের মৃত্যু হওয়ায় দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা ১১ হাজার ৪৫০ জনে পৌঁছেছে। আর নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ১৩২ জন হয়েছে। সরকারি হিসাবে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ৪ হাজার ৩২৫ জন গত এক দিনে সেরে উঠেছেন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৮১ হাজার ৪২৬ জন।

মৃত্যুর হার কমলেও শনাক্তের হার কমেনি। ফলে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি এটা বলার সময় আসেনি এখনও। সরকারি বিধিনিষেধ জারি রেখে নিজেদের আরও সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে দেশে গণপরিবহনের মালিকরা গাড়ি চলাচল করার অনুমতি চেয়ে বিক্ষোভ করছেন। সরকারের উচিত কঠোর হাতে এদের দমন করা। নতুবা প্রতিটি সেক্টরই এইসব আবদার করতে থাকবে এবং একসময় আমাদের প্রতিবেশির চেয়ে করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য সরকারের উচিত বিধিনিষেধে আরও কঠোরতা আরোপ করা। নতুবা এমন হাস্যকর উল্লাসে মেতে ওঠা ঠেকানো যাবে না।

মে মাস শুরু। আজ মহান মে দিবস। এ মাসে অন্তত আমরা আরো একটু বেশি নিজেরা সচেতন হই; নতুবা নিজেরাই নিজেই মৃত্যুর দিকে ধাপিত হবো। এ কঠিন পরিস্থিতে আমাদের সম্ভব হলে ঘরে থাকাই শ্রেয়। সকলের মঙ্গল ও সুস্বাস্থ্য কামনা। জয়তু বাংলাদেশ।