হারটা প্রায় নিশ্চিতই ছিল। পাল্লেকেলে টেস্টর পঞ্চম দিনটা একদিক দিয়ে ছিল আনুষ্ঠানিকতারই। লিটন দাস আর মেহেদী হাসান মিরাজই ছিলেন শেষ স্বীকৃত জুটি। কিন্তু এ জুটি কিছুটা লড়াই করবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, এমন প্রত্যাশা তো ক্রিকেটপ্রেমীদের ছিলই। কিন্তু সেটি হয়নি। চতুর্থ দিন ৫ উইকেটে করা ১৭৭ রানের সংগ্রহের সঙ্গে আর মাত্র ৫০ রানই যোগ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। বাকি ৫ উইকেট নিতে শ্রীলঙ্কাকে করতে হয়েছে মাত্র ২৩ ওভার। বাংলাদেশের শেষ ৩ উইকেট পড়েছে মাত্র ৯ বলের ব্যবধানে।
শ্রীলঙ্কার অভিষিক্ত বাঁ হাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমা পাল্লেকেলেতে দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছেন ১১ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন শেষ করে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনিই করুন সমাপ্তিটা টেনেছেন ৫ উইকেট নিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকে কমপক্ষে ১০ উইকেট পাওয়া ১৬তম ক্রিকেটার তিনি। এখানেই শেষ নয়। ১৯৮০ সালের পর জয়াবিক্রমা টেস্ট অভিষেকে কমপক্ষে ১০ উইকেট পাওয়া চতুর্থ বোলার।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকের মতে পাল্লেকেলে টেস্টের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে টসই। এটা জিততে না পারাই তাঁর ভাষায় ‘কাল’ বাংলাদেশ দলের, ‘আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটে টস হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই টেস্টের প্রথম দুই দিন বোলারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না। পঞ্চাশ শতাংশ টেস্ট ম্যাচেরই ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় টস।’
তবে মুমিনুলের কণ্ঠে কিছুটা আত্মসমালোচনাও ছিল, ‘শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন বাংলাদেশের মতোই। তবে আর্দ্রতাটা একটু বেশি। এটাই আমাদের কিছুটা ভুগিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চাপ থাকবে, প্রতিকূলতা থাকবে, আপনাকে এটা মেনে নিয়েই পারফরম করতে হবে। আমরা প্রথম ইনিংসেই টেস্টটা হেরে গেছি। প্রথম ইনিংসে আমাদের আরও ভালো ব্যাটিং করা উচিত ছিল
মুমিনুল ঠিকই বলেছেন। বাংলাদেশ এই টেস্টে হার দেখছিল প্রথম ইনিংসে বিপর্যয়ের পর থেকেই। শ্রীলঙ্কা নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিক করে দেয়, হারটা মোটামুটি বড় ব্যবধানেই হতে যাচ্ছে। ৪৩৭ রানের লক্ষ্য, হাতে গোটা দেড় দিন হয় হারের ব্যবধান কত ছোট করা যায়, লক্ষ্যটা হয়তো ছিল এমনই। কালই (চতুর্থ দিন) স্কোরবোর্ডে ১৭৭ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম—সবাই আউট। ‘ভরসা’ বলতে ছিলেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু তারা সত্যিকারের ভরসা দেখাতে পারেননি। প্রথমে দিনের ১৪তম বলে জয়াবিক্রমার বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন লিটন—শেষের শুরুটা সেখান থেকেই। এর কিছুক্ষণ পরেই মেহেদী হাসান মিরাজ লিটনকে অনুসরণ করেন। তিনি ৮৬ বলে ৩৯ রান করে সংগ্রম করেছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ নয়। এরপর বাংলাদেশের ভঙ্গুর টেলএন্ড আর কী করবে। শেষ ৩ উইকেট মুমিনুলের দল হারিয়েছে মাত্র ৯ বলের ব্যবধানে।
দিনের তৃতীয় ওভারে লিটনকে দারুণ এক বলে বোকা বানিয়ে ফেরান জয়াবিক্রমা। লঙ্কান বোলারদের আবেদনে সারা দিয়ে আঙুল তুলেছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু লিটন কী মনে করে যেন রিভিউ নিলেন। রিপ্লে দেখে মনে হলো, ডুবন্ত অবস্থায় খড়কুটো ধরে মানুষ যেমন বাঁচতে চায়, লিটনের রিভিউটা যেন ঠিক তেমনই। তিনি আউট হন ১৭ রানে।
মিরাজ এরপর আর কী-ই বা করতে পারতেন! কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন। তাইজুলকে সঙ্গে নিয়ে কিছু রান যোগ করেন স্কোরবোর্ডে। কিন্তু তাইজুল ৩০ বল খেলে ফিরে যান মাত্র ২ রান করে। তাঁর উইকেটটি নেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, উইকেটকিপার নিরোশান ডিকভেলার সহায়তায়। তাসকিনও ৩৩ বল টিকেছিলেন। তিনি ৭ রান করে মেন্ডিসের বলে করুনারত্নের ক্যাচ হন। মিরাজ ফেরেন জয়াবিক্রমার বলে পাথুম নিশাঙ্কার ক্যাচে। শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ এরপরপরই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন। গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।