পার্শ্ববর্তীদেশ মিয়ানমার কারাগারে আটক থাকা দুই শতাধিক বাংলাদেশী মানবেতর জীবন পার করছে। তারা সবাই মিয়ানমার বুচিডং কারাগারে আটক রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে তারা স্বদেশে ফেরার অপেক্ষায় কষ্টের প্রহর গুনছে।
এদের মধ্যে কেউ বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ শিকার করে নাফনদী হয়ে ঘরে ফেরার সময় মিয়ানমার সিমান্ত পুলিশ ধরে নিয়ে সাজা দিয়েছে। আবার সাগর পথে মালয়েশিয়াগামী, সরকারি বাহিনীর হাতে আটক হয়ে কারাদণ্ড ভোগ করছে এমনও রয়েছে।
সম্প্রতি বুচিডং কারাগার থেকে স্বজনদের কাছে পাঠানো একটি চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বজনদের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমরা মিয়ানমার বুচিডং কারাগারে বন্দি আছি। আমাদের কে সাগর থেকে ধরে নিয়ে এসেছে। এর পর বর্ডার ক্রস বলে ৫ বছর সাজা প্রদান করে। অথচ আইনগত ভাবে আছে বর্ডার ক্রস ৬ মাস।
এই বিচারটা আমরা আপনার কাছ থেকে চাই। উক্ত চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমার বুচিডং কারাগারে ৯২ জন’র সাজা শেষ হয়ছে। ২ বছর পার হয়ে গেছে এমন সাজাপ্রাপ্ত আছে আরও ৪৪ জন।
তাদের মধ্যে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বড়ইতলীর ৫ জন, উখিয়া উপজেলা জালিয়া পালং ইউনিয়ন মাদার বনিয়া এলাকার ৩ জন, মহেশখালী উপজেলার কুতুবজুম তাজিয়া খাটার এলাকার ৩ জন, সাবরাং ইউপি বাহারছড়া এলাকার ১ জন, বান্দরবন জেলার ২ নং কোহালং ইউনিয়ন কিবুক পাড়া এলাকার ২ জন, রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানার অন্তর্গত ১নং বেতবনিয়া ইউনিয়ন ৯ নং ওয়ার্ড কালা কাজী পাড়া এলাকার ১ জন, বান্দরবন জেলা থেকে ৯ জন, টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউপি তুলাতলী হারুন্না গুনা এলাকার ২ জন, হোয়াইক্যং ইউপি নয়াবাজার ৭নং ওয়ার্ড নুরুল ইসলাম’র পুত্র আব্দুরহিম, সাবরাং ইউনিয়ন শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়া ৯নং ওয়ার্ড এলাকার ১৪ জন।
মিয়ানমারের আটক বাংলাদেশী জেলেদের স্বজন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার নুরুল কবির, আবদুল গফুর ও মোহাম্মদ আয়াজ জানান, গত ২০২২ সালের ১৫ মার্চ জীবিকার তাগিদে সাগরে মাছ ধরতে গেলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি সাগরের পূর্ব দক্ষিণ দিকে বাংলাদেশের জল সিমানায় মাছ ধরারত অবস্থায় ৪ টি ফিশিং বোট ও জাল সহ ১৮ জন বাংলাদেশী মাঝিমাল্লাকে মিয়ানমারের নৌবাহিনী ধরে নিয়ে যায়। উক্ত ১৮ জন মাঝিমাল্লার মধ্যে ৪ জন অপ্রপ্ত বয়স্ক থাকার কারণে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে মিয়ারমারের বুথিডং কারাগারে আটক রাখা হয়। উক্ত আটককৃত মাঝিমাল্লার উপারজিত অর্থ দিয়ে ঘর সংসার চলে। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস সাগরে মাছ ধরে সংসার চালানো।
এসব পরিবার গুলো খুব অসহায় ও দিনে এনে দিনে খাওয়া প্রকৃতের লোক। সকলের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি মিয়ানমারের বুচিডং নামক কারাগারের জেল হাজতে আটক থাকার কারণে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। কেউ কেউ অসুস্থ অবস্থায় দিন যাপন করিতেছি। এক বছর ধরে সন্তান হারা মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজন ও ছেলে মেয়েরা, এবং পরিবারের অন্যান্য ব্যাক্তি বর্গ তাহাদের অনুপস্থিতে প্রায় অর্ধ পাগল, এমতা অবস্থায় তাহাদের অনুপস্থিতে জীবন নির্বাহ করা খুবই কঠিন ও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাদেরকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদনও করেছেন তারা।
এ প্রসংগে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশী জেলেদের ধরে নিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনা অমানবিক। এ ধরনের ঘটনা প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বিনষ্ট করে। এসব বিষয়ে সীমান্ত সম্মেলন গুলোতে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
এদিকে গত ২০২২ সালের ২১ মার্চ আবেদুজ্জামান নামের এক জেলেকেও নাফনদী থেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তার মা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়ার মাহমুদা খাতুন। তিনি তার ছেলেকে ফেরত আনার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন।
তিনি তার ছেলের বরাত দিয়ে জানান, মিয়ানমারের বুথিডং কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে হচ্ছে তার ছেলে সহ দু শতাধিক বাংলাদেশীকে। শুধু দু-বেলা ভাত দেওয়া হয় ওখানে। আর অন্যান্য সব খাবার কিনে খেতে হয়। তাই মাসে মাসে আটক বাংলাদেশীদের জন্য পরিবার থেকেও উল্টো খরচ জোগান দিতে হয় বলেও জানান তিনি।
টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ জানান, আমার এলাকার আবেদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী মিয়ানমার কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাদেরকে দ্রুত স্বদেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.কামরুজ্জামান বলেন, মিয়ানমারের আটক বাংলাদেশী জেলেদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা হাতে নেওয়া হয়েছে।